আন্তর্জাতিক

Mazibur Rahman, ঢাকা

2:10 PM, 23 March, 2021 LAST MODIFIED: 2:10 PM, 23 March, 2021

সৌদি হঠাৎ ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিল কেন?

ইয়েমেন যুদ্ধে বিরতিসহ নতুন একটি শান্তিচুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে সৌদি আরব। সম্প্রতি এ ঘোষণা দিয়েছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ। তার প্রস্তাবে বলা হচ্ছে, জাতিসংঘের নজরদারিতে ইয়েমেনজুড়ে যুদ্ধবিরতি পালিত হবে এবং সানা বিমানবন্দরের পাশাপাশি জ্বালানি ও খাদ্য আমদানির জন্য হুদায়দা সমুদ্রবন্দরও খুলে দেওয়া হবে। তবে সৌদির এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইয়েমেনি বিদ্রোহীরা।

প্রায় ছয় বছর আগে ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের দমনের লক্ষ্যে এক ‘অসম’ যুদ্ধ শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। এ লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ইয়েমেনের হাজার হাজার নিরীহ মানুষ, ঘরছাড়া হয়েছেন কয়েক লাখ। ধ্বংস হয়ে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো।

জাতিসংঘের মতে, বিশ্বে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে ইয়েমেনে। দেশটির ৮০ শতাংশ মানুষেরই জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে তারা।

এরপরও নতজানু হয়নি ইয়েমেনি বিদ্রোহীরা। এ অবস্থায় সৌদি আরব হঠাৎ যুদ্ধবিরতি কেন চাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, সৌদি সরকারের এভাবে পিছু হটার পেছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, সৌদি আরব তাদের সবচেয়ে বড় মিত্র সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আর পাশে না পেয়ে চাপে পড়েছে। বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় এসেই সৌদির কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করেছে।

ইয়েমেনে মানবিক সংকট তৈরির অভিযোগে সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে ইতালি, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোও। ফলে বহির্বিশ্বে শক্ত সমর্থন ছাড়া সৌদির পক্ষে ইয়েমেনে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়া একপ্রকার অসম্ভব হয়ে উঠেছে।

দ্বিতীয়ত, ছয় বছর ধরে যুদ্ধ করে সৌদি সরকার হয়তো অনুধাবন করছে, ইয়েমেনি বিদ্রোহীদের এভাবে দমন করা সহজ নয়। এতদিন হামলার শিকার হওয়া হুথি বিদ্রোহীরা সম্প্রতি রিয়াদসহ সৌদির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাল্টা হামলা শুরু করেছে। তাছাড়া, সৌদি আরবের জন্য যুদ্ধের ব্যয়ভারও অনেক বেড়ে গেছে।

এ বিষয়ে ইরানি সংসদের স্পিকারের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা আমির আব্দুল্লাহিয়ান বলেন, তৎকালীন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের দাবি করেছিলেন, মাত্র ১৫ দিনে তারা হুথিদের প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেবেন। কিন্তু আজ হুথিরাই বিজয়ী এবং সৌদি ও তার সমর্থকরা হতাশ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সৌদি আরব যে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে তারা কতটুকু আন্তরিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আব্দুল্লাহিয়ানের এ ধরনের মন্তব্যের কারণ, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দেওয়ার পরপরই সৌদি আরব ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বিমান হামলা চালিয়েছে। তাই মুখে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া সৌদি সরকার কাজে তার কতটুকু প্রমাণ দেবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকের মনে।

বিশ্লেষকদের একাংশের মত, এ ধরনের প্রস্তাব দিয়ে সৌদি সরকার আসলে তাদের ওপর যে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে, সেটাকে ইয়েমেনি বিদ্রোহীদের দিকে ঘুরিয়ে দিতে চাচ্ছে।

ইয়েমেনের সৌদি-সমর্থিত সরকার রিয়াদের এই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে হুথি বিদ্রোহীরা বলছে, এতে ‘নতুন কিছুই নেই’।



You have to login to comment this post. If You are registered then Login or Sign Up