গবেষণা প্রবন্ধ

Mazibur Rahman, ঢাকা

4:09 AM, 15 March, 2021 LAST MODIFIED: 4:09 AM, 15 March, 2021

ভারতের মহাকাশ সংস্থার ‘শতক’

পুষ্টিহীনতায় ভুগছে শিশুরা৷ নাগরিকরা পাচ্ছেন না ন্যূনতম বিদ্যুৎ সুবিধা৷ এরকম হাজারো সমস্যা সত্ত্বেও এগিয়ে চলেছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা৷

১৯৭৫ সালে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ দিয়ে শুরু৷ এরপর থেকে একে একে একশো'টি অভিযান সম্পূর্ণ করেছে ভারতের মহাকাশ সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অরগানাইজেশন' বা আইএসআরও৷ সংক্ষেপে যাকে ইসরো বলা যায়৷

সম্প্রতি দুটি বিদেশি স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ সফলভাবে মহাকাশে পাঠিয়ে ১০০তম মিশন সম্পূর্ণ করেছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি৷ ৯ সেপ্টেম্বর অন্ধ্র প্রদেশের শ্রিহরিকোটা লঞ্চিং প্যাড থেকে স্যাটেলাইট দুটি উৎক্ষেপণ করা হয়৷ এর মাধ্যমে ভারতের আয় হবে প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার৷

এখন পর্যন্ত বেশ কিছু স্যাটেলাইট ও আধুনিক রকেট তৈরি করেছে ইসরো৷ এছাড়া লঞ্চিং প্যাড ‘পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল'ও নির্মাণ করেছেন ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা৷

বিশ্বের অন্যতম বড় রিমোট সেন্সিং ও যোগাযোগ উপগ্রহ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে ভারত৷ ১৯৮৩ সালে এই কাজ শুরু হয়৷

State-run Indian Space Research Organizations' (ISRO) satellite GSAT-5P rocket explodes in mid-air shortly after its launch in Sriharikota, India, Saturday, Dec. 25, 2010. The satellite GSAT-5P was hit by a snag Saturday in the first stage itself after its launch from the Sriharikota space center. It was the second failure for ISRO this year. A previous developmental flight of the geosynchronous satellite launch vehicle mission in April also ended as a failure with the rocket plunging into the Bay of Bengal. (AP Photo) INDIA OUT

মাঝে মধ্যে ব্যর্থতাও এসেছে মহাকাশে উপগ্রহ পাঠানোর বেলাতে, দুই বছর আগে উৎক্ষেপণের সময় রকেট বিস্ফোরিত হয়

বর্তমানে ভারতের ২২টি স্যাটেলাইট মহাকাশে ঘুরছে৷ এগুলো দিয়ে ব্রডকাস্টিং, আবহাওয়ার পূর্বাভাষ জানা, মূল্যবান খনিজ পদার্থের সন্ধানে জিওম্যাপিং করা - এসব কাজ করা হচ্ছে৷ এছাড়া পানি এবং সাগর ও বন ব্যবস্থাপনা সহ বিভিন্ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে এই স্যাটেলাইটগুলো৷

ভারতের রকেট ব্যবহার করে ১৯৯৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৭টি বিদেশি স্যাটেলাইট মহাকাশে প্রেরণ করা হয়েছে৷ অর্থাৎ বাণিজ্যিক দিক থেকে বিবেচনা করলে ভারত এক্ষেত্রে ভালই করছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা৷

২০০৮ সালে ভারতের মহাকাশ গবেষণা একটি নতুন রূপ গ্রহণ করে যখন চাঁদের উদ্দেশ্যে একটি মনুষ্যবিহীন যান পাঠায় ইসরো৷ বিজ্ঞানীদের দাবি, ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে ঐ যানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ৯৫ শতাংশ লক্ষ্য পূরণ করতে সমর্থ হন তাঁরা৷ নাসার যন্ত্রপাতিতে ভরপুর ঐ যানটি চাঁদের উপরিভাগে পানি ও বরফের সন্ধান পেয়েছে৷

তবে ভারি যন্ত্রপাতিতে সমৃদ্ধ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সক্ষম রকেট তৈরিতে ভারত পিছিয়ে রয়েছে৷ তাদের ‘জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল' রকেট সাতবারের মধ্যে তিনবারই ব্যর্থ হয়েছে৷ অথচ ভবিষ্যতে নভোচারী সহ মহাকাশযান পাঠাতে এক্ষেত্রে সফল হওয়াটা জরুরি ছিল৷

ইসরোর সাবেক প্রধান উদিপি রামচন্দ্র রাও বলছেন, অনেক সমস্যা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত মহাকাশ গবেষণায় ভারত সফলতাই দেখিয়েছে৷ অপ্রতুল বাজেট মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা বলে মনে করেন তিনি৷ বর্তমানে ইসরোর বাজেট ১১০ কোটি ডলার৷ সংখ্যাটা মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার বাজেটের পাঁচ শতাংশের সমান৷

এরপরও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং সম্প্রতি মঙ্গল অভিযানের কথা জানিয়েছেন৷ ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মঙ্গল গ্রহের কাছাকাছি একটি অর্বিটার পাঠানোর পরিকল্পনা করছে ভারত৷

India's first unmanned mission to the Moon, Chandrayaan 1 spacecraft is seen as it is unveiled at the Indian Space Research Organization (ISRO) Satellite Centre in Bangalore, India, Thursday, Sept. 18, 2008. ISRO hopes to launch Chandrayaan-1 from the Satish Dhawan Space Centre near Shriharikota this year.(AP Photo)

ভারতের চন্দ্র মিশনের নভোযান

এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ মিলিয়ন ডলার৷ এ ধরণের অভিযানের জন্য এটা খুব বেশি একটা বরাদ্দ নয়৷ বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক কল্যাণ রায় বলছেন, মঙ্গল অভিযানের পরিকল্পনা সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যাচ্ছে না৷ ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আসলেই এটা সম্ভব হবে কিনা তা পরিষ্কার নয়৷ তাঁর মতে, এতো অল্প সময়ের মধ্যে অভিযান সফল করাটা বেশ কষ্টকর একটা ব্যাপার হবে৷

এদিকে, অনেকে এতো টাকা খরচ করে মঙ্গল অভিযানের পরিকল্পনার সমালোচনা করছেন৷ তবে ইসরোর সাবেক প্রধান রাও এই পরিকল্পনার যথার্থতা তুলে ধরে বলেছেন, ‘‘প্রাত্যহিক জীবনে মহাকাশ গবেষণার একটা গুরুত্ব রয়েছে৷ কেননা এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জ্বালানি, খনিজ পদার্থ ও পানির অনুসন্ধান চালানো হয়৷''

মহাকাশ গবেষণা নিয়ে ভারতের অন্যান্য পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে আরেকটি চাঁদ অভিযান পরিচালনা এবং ২০১৬ সালে মহাকাশে মানুষ পাঠানো৷ এছাড়া সূর্য সম্পর্কে তথ্যের জন্য সৌর পরিমণ্ডলের আশেপাশে একটি স্যাটেলাইট পাঠানোরও পরিকল্পনা করছে ভারত৷




You have to login to comment this post. If You are registered then Login or Sign Up