শিল্প ও সাহিত্য

Mazibur Rahman, ঢাকা

1:43 AM, 15 March, 2021 LAST MODIFIED: 1:43 AM, 15 March, 2021

আমাদের কথাসাহিত্য কি হুমায়ূনময়?

ভাত-কাপড়ের চাহিদা মেটার পর আমরা আরও কিছু চাই। বিশেষ করে মন ও দেহের খোরাক। বই আমাদের মনের খোরাক। সেই বইতে যা থাকে তাকে সাহিত্যও বলতে পারি। এই সাহিত্যের দুটি ধারা নানা নামে চলে আসছে অনেক দিন থেকে। একটি ধ্রুপদী অন্যটি সাধারণ বা জনপ্রিয় ধারা। আমি বিগত তিন-চার বছরের বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের ওপর একটি ভ্রমণ শেষ করেছি সম্প্রতি। আর এই ভ্রমনই আমাকে এই লেখাটার মশলা যোগান দিয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান কথাসাহিত্যের ধারা বা প্রবাহ উপলব্ধিতে সাহায্য করেছে। সমকালের প্রায় বিশ-পঁচিশ জন তরুণ কথাসাহিত্যিকদের লেখা নিয়ে আমার এই আলোচনা। যারা গত এক দশকেরও কম সময় (কেউ কেউ হয়তো একটু বেশি) ধরে গল্প-উপন্যাস লিখে চলেছেন। কেউ কেউ অল্প-বিস্তর জনপ্রিয়তা পেলেও অনেকেই তেমন পরিচিত নন। অনেকে আবার জনপ্রিয় না হলেও লেখার ক্ষমতায় সচেতন পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এদের নাম বইয়ের বিষয় বা লেখার বৈশিষ্ট্য নিয়ে ব্যবচ্ছেদ করবার আগে একটা কথা খুব জোর দিয়ে বলতে চাই। আর তা হল বাংলা দেশের কথাসাহিত্যের যে ভূমিতে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হকরা একটা ধ্রুপদী ভীত গড়েছিলেন তার পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদ বা ইমদাদুল হক মিলনসহ আরও কয়েকজন লেখক একটি দারুণ সফল জনপ্রিয় ধারা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বিশেষ করে স্বাধীনতার পর থেকে। যা আশি ও নব্বইয়ের দশকে এসে তুঙ্গে ওঠে। এর ফলে দুটি লাভ হয়েছিল। একটি মানুষের মধ্যে বইপড়া অভ্যাস গড়ে উঠেছিল, পাঠক তৈরি হচ্ছিল। পাশাপাশি প্রকাশনা শিল্পও বেশ চাঙা হয়ে ওঠে। আর সেকারণেই হয়তো বই মেলায় বইয়ের বিক্রি আর অটোগ্রাফ শিকারিদের ভীড় বাড়তে থাকে। বাঙালির সংস্কৃতি প্রসারে এর গুরুত্ব কোনোভাবেই অস্বীকার করার অবকাশ নেই।

আমার পাঠ-পর্যবেক্ষণ থেকে দেখতে পাই আমাদের সাম্প্রতিক প্রকাশিত গ্রন্থের নতুন লেখকদের অধিকাংশই এই জনপ্রিয় ধারাকে অব্যাহত রাখার চেষ্টায় নতুন নতুন গল্প-উপন্যাস রচনা করে যাচ্ছেন। হুমায়ূন আহমেদের সফল গল্প, পাঠতৃপ্ত গদ্যভঙ্গি ও রস সমৃদ্ধ কথোপকথনের ভাষা যেন তাদের মগজে-কলমে প্রভাব বিস্তার করে আছে। অসংখ্য উদাহরণ দিতে পারি। কিন্তু না, একটা শুধু দিচ্ছি। মধ্যবিত্ত জীবনের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি-সীমাবদ্ধতা আর স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের যে গল্প অবলীলায় বলে পাঠকে মন্ত্রমুগ্ধ রেখেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ তারই যেন এক মায়া শিকড়ের প্রভাবে বাধা পড়ে গেছেন বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অনেক লেখক। এমন কী বর্ণনা ও বিশ্লেষণের ভাষাতেও সেই প্রভাব। দু একজন এই চেষ্টায় আবার বেশ সফলও। বিশেষ করে নতুন গল্প বলার সৃজনশীলতায়। যেমন সাদাত হোসাইন। তার ‘মেঘেদের দিন’ আর ‘মরনোত্তম’ পড়ার পর আমার তাই মনে হয়েছে। তবে সাদাত অনেক বেশি রাজনীতি ও সমাজ সচেতন। সমকালীন জীবন তার লেখায় দারুণ ভাবে উপস্থিত। আরও দুজন লেখকের নাম না বললেই নয়। কাসাফাদৌজা নোমান এবং কিঙ্কর আহসান। লেখক ইশতিয়াক আহমেদও একই কাতারে পড়েন। তাদের উপন্যাস-গল্পগুলোও পাঠককে স্পর্শ করে। যদিও উপস্থাপন ভঙ্গিতে হুমাযূন মগ্নতা আছে। তেমনি ভাবে আমি সম্ভাবনা দেখতে পাই আরও কারো লেখায়। সেগুলো যথাসময়ে বলা হবে। কথাসাহিত্যের দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে তাদের সামর্থ ও সম্ভাবনা আমাকে আশান্বিত করে তোলে। সে সব নিয়ে এ লেখায় আলোচনা করা হয়েছে। তবে ভাষার ভঙ্গিতে এরা সবাই হুমায়ূন-মিলনের কাছে কমবেশী ঋণী। মূল আলোচনায় যাবার আগে কয়েকটা উদাহরণ দেই।
‘আজিজ মাস্টার ঢাকা যাচ্ছেন। তিনি দবির খা মেমোরিয়াল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি ঢাকা যাচ্ছেন। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যের কথা কেউ জানে না’ (মরনোত্তম, সাদাত হোসাইন)



You have to login to comment this post. If You are registered then Login or Sign Up