শিল্প ও সাহিত্য

Mazibur Rahman, ঢাকা

1:42 AM, 15 March, 2021 LAST MODIFIED: 1:42 AM, 15 March, 2021

এদুয়ার্দো গালেয়ানোর দর্পণ: যে পিতা কখনও হাসতেন না ও অন্যান্য

যে পিতা কখনও হাসতেন না
ইহুদী, খ্রীষ্টান আর মুসলমানরা একই ঈশ্বরের উপাসনা করেন, বাইবেলের ঈশ্বর যিনি তিনটি নামের কথা বলেন, তাঁরা হলেন যিহোবা, ঈশ্বর এবং আল্লাহ, মূলতঃ তা নির্ভর করে কে কি নামে তাঁকে ডাকছেন। তাঁরা বলেন, ঈশ্বরের নির্দেশেই ইহুদী, খ্রীষ্টান আর মুসলমানরা একে অপরকে হত্যা করে।
অন্যান্য ধর্মে, ঈশ্বর হলেন অথবা ছিলেন সংখ্যায় অনেক। গ্রিস, ভারত, মেক্সিকো, পেরু, জাপান, চীন সকলে অসংখ্য দেবতা নিয়ে গর্ব করেন বা গর্বিত হন। তবুও বাইবেলের ঈশ্বরের হিংসা দূর হবার নয়। কার প্রতি তাঁর হিংসা? তিনিই যদি একমাত্র সত্যিকারের ঈশ্বর হয়ে থাকেন, তাহ’লে অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতা নিয়ে এতো চিন্তিত হবেন কেন?
“তুমি ভিন্ন কোন ঈশ্বরের কাছে নত হইও না, অথবা তাহাদের সেবা করিও না; কেননা সদা প্রভু আমি, তোমাদের ঈশ্বর, একজন ঈর্ষাপরায়ন ঈশ্বর।” (যাত্রাপুস্তক ২০ঃ৫)
কেন তিনি পিতা-মাতার অবিশ্বস্ততার জন্য তাঁদের কয়েক প্রজন্মের সন্তানসন্ততিদের শাস্তি দেবেন?
“আমি সদা প্রভূ, তোমাদের ঈশ্বর, আমি পিতৃগণের অপরাধের প্রতিফল সন্তানদিগের উপরে বর্ত্তাই, যাহারা আমাকে দ্বেষ করে, তাহাদের তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষ পর্যন্ত বর্ত্তাই।” (যাত্রাপুস্তক ২০ঃ৫)
তিনি এত নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন কেন? কেনই বা তিনি তাঁর অনুসারীদের এত অবিশ্বাস করেন? কেন তিনি তাঁদের আনুগত্য পেতে এত হুমকি দেন বা ভয় দেখান? তিনি নিজে অথবা তাঁর পয়গম্বরদের মুখ দিয়ে স্পষ্ট ও সরাসরিভাবে সতর্ক করে বলেনঃ
“কিন্তু যদি তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত না কর … …প্রভূ তোমাকে গ্লানি দ্বারা আঘাত করিবেন, জ্বরে আক্রান্ত করিবেন, এবং আগুনে নিক্ষেপ করিবেন, খরা দ্বারা তীব্রভাবে পোড়াইবেন। তোমার প্রতি কন্যার বাগদান হইবে কিন্তু তাহাতে অন্য পুরুষ উপগত হইবে… সদাপ্রভু তোমার দেশে জলের পরিবর্তে আকাশ হইতে ধূলা ও বালি বর্ষণ করিবেন… তুমি বহু বীজ বহিয়া ক্ষেত্রে লইয়া যাইবে, কিন্তু অল্প সংগ্রহ করিবে; কেননা পঙ্গপাল তাহা বিনষ্ট করিবে। তুমি দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার পাইট করিবে, কিন্তু দ্রাক্ষারস পান করিতে কি দ্রাক্ষাফল চয়ন করিতে পারিবে না; কেননা কীটে তাহা খাইয়া ফেলিবে।..তোমরা দাসদাসীরূপে আপন শত্রুদের কাছে বিক্রীত হইতে চাহিবে, কিন্তু কেহ তোমাদিগকে ক্রয় করিবে না।” (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮)
“ছয় দিন কার্য্য করা হইবে, কিন্তু সপ্তম দিন সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে বিশ্রামার্থক পবিত্র বিশাম দিন, সেই বিশ্রামদিনে যে কেহ কার্য্য করিবে, তাহার প্রাণদন্ড অবশ্য হইবে।” (যাত্রা ৩১ঃ১৫)
“আর যে সদাপ্রভুর নামের নিন্দা করে, তাহার প্রাণদন্ড অবশ্য হইবে; সমস্ত মন্ডলী তাহাকে প্রস্তরাঘাতে বধ করিবে।” (লেবীয় পুস্তক ২৪ঃ১৬)
মানুষ শক্তের ভক্ত, নরমের যম। মুলা ঝোলানোর থেকে মুগুড় ভালো। বাইবেল হল অবিশ্বাসী লোকদের জন্য কঠোর শাস্তির এক ফর্দ।
“আমি তোমাদের মধ্যে বনপশু পাঠাইব.. আমি পাপপ্রযুক্ত তোমাদিগকে সাত গুণ অধিক শাস্তি দিব। আর তোমরা আপন আপন পুত্রগণের মাংস ভোজন করিবে, ও আপন আপন কন্যাগণের মাংস ভোজন করিবে।..তোমাদের পশ্চাতে খড়গ নিষ্কোষ করিব, তাহাতে তোমাদের দেশ সকল ধ্বংসস্থান ও তোমাদের নগর সকল উৎসন্ন হইবে।” (লেবীয় পুস্তক ২৬)
চিরকাল ক্ষুব্ধ এই ঈশ্বর আজও তাঁর তিনটি ধর্মের মাধ্যমে বিশ্বকে শাসন করেন। তিনি তা নন, যাকে আমরা সহানুভূতিশীল বলে ডাকতে পারিঃ
“ঈশ্বর ঈর্ষাপরায়ণ ও সদাপ্রভু প্রতিফলদাতা; সদাপ্রভু প্রতিফলদাতা ও ক্রোধশালী; সদাপ্রভু আপন বিপক্ষগণকে প্রতিফল দেন, ও আপন শত্রুগণের জন্য ক্রোধ সঞ্চয় করেন।” (নাহূম ১ঃ২)
তাঁর দশ অনুশাসনে যুদ্ধকে অবৈধ করা হয়নি। বিপরীতে, তিনি এটি সম্পন্ন করার আদেশ দেন। তাঁর যুদ্ধ মানে কারো প্রতি কোন ধরণের করুণা ছাড়াই যুদ্ধ, এমনকি শিশুদেরও ছাড় নেইঃ
“এখন তুমি গিয়া অমালেককে আঘাত কর, ও তাহার যাহা কিছু আছে, নিঃশেষে বিনষ্ট কর, তাহাদের প্রতি দয়া করিও না; স্ত্রী ও পুরুষ উভয়কে, নাবালক ও দুগ্ধপোষ্য শিশু, গোরু, মেষ, উষ্ট্র ও গর্দ্দভ সকলকেই বধ কর।” (স্যামুয়েল ১৫ঃ৩)
“হে বাবিল-কন্যা, হে বিনাশপাত্রিঃ ধন্য সেই, যে তোমার শিশুগণকে ধরে আর শৈলের উপরে আছড়ায়।” (গীতসংহিতা ১৩৭ঃ৯)

নরকের সূত্রপাত
ক্যাথলিক চার্চ নরক আবিস্কার করে। একইভাবে শয়তানের আবিস্কারও তাদেরই হাতে।
ওল্ড টেস্টামেন্টে কিন্তু অনন্তকাল ধরে আগুনে ঝলসানোর কথা উল্লেখ নেই, এমনকি সেখানে কোন দৈত্যের কথাও বলা নেই যে গন্ধকের বাস্প ছাড়ে, ত্রিশূল বহন করে, মাথায় যার শিং ও লেজ, ধারালো নখ, পায়ে খুর, ছাগলের মতো পা আর যার ড্রাগনের মতো ডানা আছে।
চার্চ নিজেকেই যেন প্রশ্ন করেঃ শাস্তি বিনা পুরস্কারের কি কোন মানে আছে? ভয় বিনা আনুগত্যেরই বা কি মানে আছে?
আবার সে বিস্মিত হয়ে ভাবেঃ শয়তান ছাড়া ঈশ্বর কী করে হয়? তেমনিভাবে, মন্দ ছাড়া ভালো কীভাবে আসে?
শেষে চার্চ এই সিদ্ধান্তে আসে যে, স্বর্গের প্রলোভনের চেয়ে নরকের হুমকি অধিক কার্যকর। আর সেই থেকে ধর্মীয় দূত ও পবিত্র যাজকরা আমাদেরকে জ্বলন্ত নরকের অত্যাচারের ভয় দেখিয়ে সস্ত্রস্ত করে যাচ্ছেন, যেখানে মন্দ লোকদের আশ্রয় হবে।
২০০৭ সালে, ষোড়শ পোপ বেনেডিক্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেনঃ
“সেখানে নরক আছে। এবং তা চিরন্তন।”

প্রিসিলায়ান
ভূগর্ভস্থ সমাধি প্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
কলিসিয়ামে, খ্রিস্টানদের সিংহরা খেয়ে ফেলত।
রোম তখন বিশ্বাসীদের বিশ্ব-রাজধানীতে পরিণত হয়েছিল আর ক্যাথলিক ধর্ম সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয় ধর্ম হয়েছিল।
এবং ৩৮৫ সালে, চার্চ যখন বিশপ প্রিসিলিয়ান ও তাঁর অনুসারীদের দোষী সাব্যস্ত করে, রোম সম্রাট তখন সকলকে বিধর্মী হিসেবে হত্যা করেন।
মাথা ঘুরে যায়।
খ্রিস্টানদের নেতৃত্ব দেয়া বিশপ প্রিসিলিয়ান দোষী সাব্যস্ত হয়। বলা হয়ঃ
তাঁরা নাচত আর গাইত, অন্ধকার ও আগুনের উৎসব করত,
খ্রিস্টীয় ধর্মসভাকে তাঁরা গ্যলিসিয়ার পৌত্তলিক উৎসবে পরিণত করেছিল, গ্যলিসিয়া ছিল একটি সন্দেহজনক জায়গা, যেখানে প্রিসিলিয়ান জন্ম গ্রহণ করেছেন,
তাঁরা দলবদ্ধভাবে বসবাস করত এবং গরীব ছিল,
চার্চের ক্ষমতাকেন্দ্রিক জোট তারা মানতে চাননি,
তাঁরা দাসত্বকে অস্বীকার করেছিল,
এবং তারা নারীদের যাজক হিসেবে ধর্মোপদেশ দেবার অনুমতি দিয়েছিল।



You have to login to comment this post. If You are registered then Login or Sign Up